অভাবের তাড়নায় ফেসবুকে হৃদয় বিদারক চিঠি লিখে যুবকের- আত্মহত্যা
নিকলী ছাতিরচর ইউনিয়ন উত্তর পাড়া কাজী বাড়িতে আবু তাহের (৪৫) নামের এক ব্যক্তি অভাবের তারনায় আত্মহত্যা করে। নিহত তাহেরউদ্দিন নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের মধ্যপাড়ার রমিজউদ্দিন এর ছেলে।
অসুস্থতার জন্য কোনো কর্ম করতে না পারায় অভাবের তাড়নায় গাছের সাথে ফাসি দিয়ে আজ রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে আত্মহত্যা করে।
চাচাতো বোন ও এলাকাবাসীকে উদেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম “শান্তিপূর্ণ ভূমি” একটি মেসেন্জার গ্রুপে এমন চিঠি লিখে যান তিনি। স্টেটাসটি হুবুহু দেয়া হলো:
আমার মতো অকর্মার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নাই। কাজ করিতে না পারিলে আসমান থেকে খাবার আসার কোন সিসটেম নাই। দুনিয়াতে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য অনেকগুলি পথ খোলা থাকে। যখন সবগুলো পথই বন্ধ হয়ে যায় তখনই মানুষ এই ধরনের গর্হিত কাজ করে।
ভারতের গুজরাটে আইন করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো আযান!
আমি আরও অনেক দূরে গিয়ে মরতাম। এমন জায়গায় যেতাম কেউ কোন দিন আমার লাশও খোঁজে পেতনা। দূরে গেলে বাড়ির মানুষ খোঁজাখুঁজি করে হয়রানির শিকার হতো আর টাকা পয়সা নষ্ট করতো।
আমার অসুখ হওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। পরিশ্রমের কোন কাজ করিতে পারিতাম না। সহজ কাজ হলে করিতে পারিতাম। বসিয়া কাজ বা কিছুটা হাঁটাহাঁটি করিয়া কাজ হলে করিতে পারিতাম।
এমনিতেই কাজ করিতে পারি না তার উপরে আবার মানসিক অসুখ। একটুখানি কাজ করিলেই হাত সহ শরীর কাঁপতে শুরু করে। যখনই শরীরটা কাঁপতে শুরু করে তখনই আমি মানসিক এবং শারীরিক ভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়ি।
আমার বড় ভাই আমাকে বলে ছিল চেষ্টা করিলেই সব কাজ করা যায়। আমি সেই কথা মাথায় রেখে অনেক কাজ বহুবার করে চেষ্টা করেছি। পারি নাই। তো আরকি করব। আমার আর কোনকিছু করার নেই। দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে হলে কাজ করতে হবে। কাজ ছাড়া বাচাঁর কোন উপায় নেই।
অসুস্থতার জন্য আমার কাছে কোন মূলধন ছিলনা। কয়েকজন কে বললাম আমাকে কিছু টাকা ধার হিসাবে দাও একটি দোকান দিব পরে আস্তে আস্তে শোধ করে দিব। না পেলামনা। মৃত্যুর আগে কেউ মিথ্যা কথা বলতে পারেনা। কাজ যেটাই করিতাম সততার সাথে করিতাম এবং কেউ যদি আমাকে মূলধন দিয়ে একটি দোকান করিবার সহযোগিতা করিত তাহলে দোকানের লাভ দিয়ে তার টাকা পাই টু পাই তাকে বুজিয়া দিতাম। এবং সারাজীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতাম। তারা মনে করিত আমার তো কোন কিছুই নাই যদি টাকা ফেরত দিতে না পারি। কারো টাকা মেরে দেওয়া বা কারো সাথে প্রতারণা করা আমার চরিত্রে ছিলনা।
আমার স্বভাবের মধ্যে একটা নেগেটিভ দিক ছিল তাড়াতাড়ি কারো সাথে মিশতে পারতামনা।
মানসুরাকে দেখাশোনা করার জন্য খুকীর মা আছে এবং আমি আমার বড় ভাইকে ও মেহেদী হাসানের মাকে অনুরোধ করে যাইতেছি যে তারা যেন মানসুরাকে একটু দেখাশোনা করে। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমিই আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী।
আমার ছালে ফুফুকে বলে দিও তার লুলা মামু চলে গেছে।
আর খুকীর মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমাকে আমি কষ্ট ছাড়া আর কোনকিছুই দিতে পারলামনা।
নিকৃষ্ট কাজের মধ্যে একটা কাজ হলো কারো কাছে কোনকিছুর প্রতিদান চাওয়া। হে ফাতেমা আর শামীমা তোদেরকে বলছি। তোদের প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল স্বচ্ছ পানির মতো নিখুঁত পরিস্কার। একজন পিতা তার সন্তানকে যেমন ভালোবাসে ঠিক তদ্রূপ আমি তোদেরকে এমন ভালোবাসতাম। হয়তো তোদেরকে আমি কোনদিন কোনকিছু দিতে পারি নাই।
কারণ অসুস্থতার জন্য কোনদিন ঘুরে ফিরে দাঁড়াতে পারি নাই। এখন এখানে দুইটা প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রথম প্রশ্ন – তোরা ছাড়া আমার আরো অনেকগুলি চাচাতো বোন আছে। তাদের প্রতি আমার এত ভালোবাসা নাই কেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন -তোরা আমার চাচাতো বোন। তোরা ছাড়া আমার আপন ছোট দুই বোন আছে। আপন বোনের চেয়ে চাচাতো বোনের প্রতি এত ভালোবাসা কেন?
প্রথম প্রশ্নের উত্তর -আমার অসুস্থতার কারণে কোন কাজ করিতে না পারায় আমি অনেক দিন বাড়িতে ছিলাম তোদের সাথে।
তখন বাড়িতে আমার অন্যান্য কোন চাচাতো বোন ছিলনা। তোদের সাথেই আমার ওঠাবসা বেশি হয়েছে। আমার যখন রোগটি উঠিত আমি কোনকিছু বলার আগেই তোদের হাতের ছোঁয়া আমার শরীরে অনুভূতি পাইতাম। রোগ উঠিলে কথাও বলিতে পারিতামনা। তোরা আমার মনের ভাষা বুজতি। তখন আমাকে কিভাবে সেবা করিতে হইবে তা তোরা নিজের মতো করে করতি। তাই তোদের প্রতি আমার মনের ভিতরে আলাদা একটা ভালোবাসা কিভাবে জন্ম নিয়েছে আমি নিজেও টের পাইনি।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর -আমার আপন ছোট দুই বোন আছে। তারা আমার বয়সে প্রায় পিঠেপিঠি। পিঠেপিঠি হওয়ার কারণে খুনসুটি হয়েছে বেশি। খুনসুটির বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর পরই তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বোনকে কিভাবে ভালোবাসতে হয় তা অনুভূত হওয়ার আগেই তাদের বিয়ে হয়ে গেছে এবং আমি নিজেও কাজের সুবাদে অন্যত্র থাকতাম। আর তোদের সাথে আমার বয়সের অনেক পার্থক্য। তাই তোদের জন্য আমার আলাদা একটা টান ছিল। আজ আমি তোদের কাছ থেকে আমার ভালোবাসার প্রতিদান চাই। আমি আমার দুইজন সন্তান রেখে গেলাম। তাদেরকে একটু ভালোবাসা দিস।
ছাতির চর বাসী সবার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমার এছাড়া আর কোন কিছু করার ছিলন।
আর পড়ুন
১২ জনের বেশি মুসল্লি নিয়ে নামাজ পড়ায় ইমামের উপর হামলা
গতকাল (বুধবার) দিবাগত রাতে (২৯/০৪/২০২০) কিশোরগঞ্জ জেলা সদর উপজেলার যশোদল বড়ইতলা গ্রামের শহীদ নগর জামে মসজিদের ইমাম ১২ জনের অধিক মুসল্লি নিয়ে তারাবিহের নামাজ পড়াতে অপারগতা প্রকাশ করায় ইমাম সহ ৫ জন সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার।
কিভাবে বিদায় নিবে আমাদের দেশ থেকে করোনা নামক মহামারীর আজাব?
আমাদের কপাল ভাল। আল্লাহ তাআলা দয়া করে আমাদেরকে সামান্য আজাবের সম্মুখীন করেছেন আমরা তো এর চেয়ে আরো ভয়াবহ আজাব এর উপযুক্ত।
একদিকে ১২ জনের অধিক মুসল্লি নিয়ে তারাবিহের নামাজ পড়লে প্রশাসনের কাছে জবাবদিহিতা মূলক আইনের সম্মুখীন হতে হয়।
অপরদিকে ১২ জনের অধিক মুসল্লি নিয়ে নামাজ না পরার কারনে নিরীহ ইমাম-মুয়াজ্জিনগণ সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হতে হয়। মনে রাখবেন যে দেশে নিরীহ মানুষদের ওপর জুলুম অত্যাচার করা হয় সে দেশের মানুষদের সুখ-শান্তি এর চেয়ে বেশি আশা করা যায় না।
দেশের জনপ্রতিনিধিদেরকে বলবো
আপনারা হয়তো মসজিদ উন্মুক্ত করুন না হয় এই সমস্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
অন্যথায় মনে রাখবেন এর চেয়ে আর ভয়াবহ বিপদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
Collected :- Facebook