করোনায় কোনো শ্রমিকের কিছু হলে দায়িত্ব আমরা নেব
ঈদের আগেই সব তৈরি পোশাক কা’রখানা খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছে বিজি’এমইএ৷ তারা বলছে, করোনায় কোনো শ্রমিকের কিছু হলে তার সব দায়দায়িত্ব মালিকরা নেবেন৷ যদিও এখনো তিনশ কারখানার শ্র’মিকরা বেতন পাননি৷বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আরশাদ জামাল দিপু জানিয়েছেন,‘ঈদের আগেই সব তৈরি পোশাক কারখানা খুলে যাবে।’
আর তৈরি পোশাক মালিকদের এই সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট রুবানা হক বলে’ছেন,‘করোনায় কোনো শ্রমিকের কিছু হলে সব দায়িত্ব আমরা নেব৷কত কারখানা খুলেছে বিজিএমইএ জানিয়েছে বৃহস্প’তিবার পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর, সাভার , আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ৮৯০টি কারখানা চালু হয়েছে৷ শ্রমিকেরা কা’জে যোগ দিয়েছেন৷ মোট শ্রমিকদের ৪২ ভাগ কাজে যোগ দিতে পেরেছেন৷
বিজিএমইএ যে কারাখানাগুলোর হিসেব দিচ্ছে সেগুলো আ’সলে সরাসরি পোশাক রপ্তানি করে৷ বিজি’এমই বলছে এই রকম পোশাক কারখানার সংখ্যা দুই হাজার ২৭৪টি ৷ সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোতে ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৪১৭ জন শ্রমিক আছেন৷
কিন্তু বাস্তবে পোশাক কারখানার সংখ্যা সারা’দেশে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি৷ কারণ অনেক কারখানা আছে যারা সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে৷ এসব কারখানায় ৫০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ ক’রেন৷শিল্প পু’লিশ সূত্র জানায়, সারাদেশে এপর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি পোশাক কারখানা খুলেছে৷
এটা নিশ্চিত করার জন্য মনিটরিং টিম গঠ’ন করা হয়েছে৷ রুবানা হক জা’নান,‘যেসব কারখানা খোলা হয়েছে তার ভিতরের ছবি আমরা সংগ্রহ করছি যাতে সেখানকার পরিস্থিতি বোঝা যায়৷ কেউ যদি কোভিড আ’ক্রান্ত হন তা যেন গো’পন করা না হয়৷ আমাদের ওয়াচ কমিটি আছে৷ আমাদের সা’থে চিকিৎসকরা আছেন৷
কোনো শ্রমিক যাতে ক্ষ’তি’গ্রস্ত না হন, বিপদে না পড়েন সেটা আমরা দেখব৷ যদি কোনো শ্রমি’কের কোনো কি’ছু হয় তাহলে সম্পূর্ণ দায়ভার আমাদের৷ আমরা তার খরচ থেকে শুরু করে সবকিছু দেখব৷ আমরা শ্রমিকদের করোনা টেস্টের জন্য চারটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছি৷’
তিনি আরো বলেন,‘যেসব শ্রমি’ক আগেই এসে’ছেন বা গ্রামের বাড়ি’তে যাননি তাদের দিয়েই কারখানা খুলছি সীমিতভাবে৷ কোনো কোনো শ্রমিক বাড়ি থে’কে পা’লিয়ে এসেছে চাকরির জন্য৷ তাদের আমরা নিরুৎসাহিত করছি৷ তাদের আমরা এপ্রিল মাসের বেতন তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেব৷’
তবে সারাদেশে জরুরি সেবার বাই’রে যানবা’হন চলাচল বন্ধ থাক’লেও শ্রমিকরা না’নাভাবে পোশাক কারখা’নায় ফিরছেন৷ বিশেষ করে ফেরিঘাটগুলোতে শ্রমিকদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যাচ্ছে৷ শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন,‘কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও সামজিক দূরত্বের কিছু ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়৷ সব কারখানা মেশিনগুলোর দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি৷ তবে মালিকরা বলেছে কেউ করোনায় আ’ক্রান্ত হলে চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন৷’
তিনি আরো জানান,‘এরইমধ্যে দুইজন পোশাক কর্মী করো’নায় আ’ক্রা’ন্ত হয়ে’ছেন৷ উচি’ত ছি’লো সবার স্বা’স্থ্য পরী”ক্ষার পর কারখানায় প্রবেশ করানো৷ এখনো সব মিলিয়ে প্রায় তিনশ কারখানায় শ্রমিকরা মার্চ মাসের বেতনই পাননি৷ এরমধ্যে দেড়শ কারখানায় কোনো বেতনই দেয়া হয়নি৷ আর দেড়শ কারাখানায় বেতনের অর্ধেক দেয়া হয়েছে৷ বৃহস্পতিবারও কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমি’করা ব’কেয়া বেতনের দাবি’তে বি’ক্ষো’ভ করেছেন৷ আর শ্রমি’কদের নানাভাবে কাজে যোগ দেয়ার নোটিশ দেয়া হচ্ছে৷’
পোশাক কারখানার কত ক্ষ’তি
গত তিন মাসে পোশাক কারখা’নার সব মি’লিয়ে ৬০ ভাগের মত অর্ডার বাতিল হ’য়েছে৷ যার পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি৷ তবে এটাকে পুরোপুরি বাতিল বলা যাবে না৷ বিজিএ’মইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসি’ডেন্ট আরশাদ জামাল দিপু জানান,‘৩০ ভাগের মত অর্ডার বাতিল হয়েছে৷ আরো ২৫ থেকে ৩০ ভা’গের মত অ’র্ডার হোল্ড আছে৷ অর্ডার হোল্ড, বাতি’ল, বিলম্ব সব মিলিয়ে ৬০ ভাগ হবে৷’
তিনি বলেন,‘মাসে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়৷ সেই হিসেবে তিন মাসে সাত বিলিয়ন ডলার বা কিছুৃ বেশি অর্ডার ছিলো৷’
তবে এই সব অর্ডার শেষ পর্যন্ত বাতিল হবে না৷ অর্ডার ফিরে আসছে৷ আবার কিছু অর্ডার হয়তো পরের বছর অ্যাডজাষ্ট হবে৷ সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ২৫ ভাগ অর্ডার চূড়ান্তভাবে বাতিল হওয়ার আ’শঙ্কা ক’রছেন বিজিএমইএর এই সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট৷ তিনি বলেন,‘ক্রেতারা তো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি৷ ইউরোপে ৬২ ভাগ দোকান বন্ধ৷
কিন্তু চীনে খুল’ছে৷ আরো কিছু কিছু দে’শে ক্রেতা’রা তাদের ব্যবসা খুলতে শুরু করেছে৷ ফলে ক্যান্সেল বা স্থগিত হওয়া অর্ডার আবার ফিরে আ’সছে৷ সুইডেনতো বলেই দিয়ে’ছে অর্ডারে’র টাকা আ’মাদের দিয়ে’ দেবে৷’
‘আমরা আশা ক’রছি পোশাক খাতের এই ক্ষ’তি কাটিয়ে উঠতে পারব৷ তবে এজন্য করোনা টেস্টিংটা দ্রুত হওয়া প্রয়োজন৷ আমরা চাই র্যাপিড টেস্টিং৷ তবে শুনছি মে মাসে নাকি করোনা আরো বেড়ে যাবে৷ তাই ভ’য়ও হয়,’ বলেন আরশাদ জামাল দিপু৷
বিজিএ’মইএ জা’নায়, এখন পর্যন্ত অর্ডারের ৩.১৫ বিলিয়ন ড’লার পাওয়া গেছে ক্রেতাদের কাছ থেকে৷ যারা অর্ডার ক্যান্সেল করেছে তাদের কে’উ কেউ ১৮০ দিন পরে পেমেন্ট ক’রার ক’থা বলছে৷ কিন্তু কাঁচামালের দায় কে নেবে?বাংলাদেশের পোশাক খাতে এখনো নতুন অর্ডার আসা শুরু হয়নি৷ মোটামুটি’ভাবে দেড় মাসের অর্ডার জমে আছে৷ যেগুলো না দিলেই নয় সেগুলো এখন সীমিত পরিসরে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে বলে জা’নায় বিজিএমইএ৷ সূত্র : ডয়চে ভেলে crimenewsbd.net