প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ৬ জনে মিলে ধর্ষণের পর হত্যা করে

কেউ রিকশাচালক, কেউ শ্রমিক, কেউবা পুরোনো জিনিসপত্র কুড়িয়ে (ভাঙ্গারি) বিক্রি করেন। তবে তারা সবাই মা’দকসেবী হওয়ার পাশাপাশি ছোটখাটো চুরি ও ছি’নতাইও করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে সব বন্ধ হওয়ায় রোজগারও বন্ধ হয়ে যায়।

এ সময়ই তারা জানতে পারেন, পাড়ার মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজওয়ান হোসেন কাজলের বাড়িতে হু’ন্ডির মাধ্যমে আসা ২০-২২ লাখ টাকা আছে। ধারণা মাত্রই ডা’কাতির পরিকল্পনা করেন তারা। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে ভুল ভা’ঙে তাদের।

৩০ হাজার টাকা ও কিছু স্বর্ণালঙ্কার ছাড়া কিছুই পায়নি চ’ক্রটি। ধর্ষণ করেন মা ও দুই মেয়েকে। চিনে ফেলায় পরে মাসহ দুই মেয়ে ও প্রতি’বন্ধী ছেলেকে হ’ত্যা করেন তারা।

গাজীপুরে মা ও তিন সন্তানসহ চা’ঞ্চল্যকর চার খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচজনকে গ্রে’ফতারের পর বুধবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জা’নান র‌্যাবের লিগ্যা’ল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।’

গ্রেফতাররা হলেন- কাজিম উদ্দিন (৫০), মো. হানিফ (৩২), মো. বশির (২৬), মো. হেলাল (৩০), ও এলাহি মিয়া (৩৫)।

গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে গাজীপুরের শ্রী’পুর উপজেলার জৈ’নাবাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে এক প্র’বাসীর স্ত্রী ফাতেমা (৩৮), দুই মেয়ে নূরা (১৭), হাওয়ারিন (১৩) এবং এক ছেলে ফাদিলের (৮) গলা কাটা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রোববার (২৬ এপ্রিল) রাতে শ্রীপুরের আদাবর এলাকা থেকে মূল হোতা পারভেজকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পারভেজের (১৭) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভি’কটিমের বাড়ি থেকে লুট করা মালামাল ও আসামিদের পরিধেয় ব’স্ত্র (রক্তমাখা) যথাক্রমে নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি হলুদ রঙের গে’ঞ্জি, একটি জিন্স প্যান্ট, তিনটি লু’ঙ্গি এবং একটি আংটি উদ্ধার করা হয়।

পা’রভেজ র‌্যাবের হাতে গ্রে’ফতার কাজিম উদ্দীনের ছে’লে। ঘটনার সময় কাজলের বড় মে’য়েকে বাবা ও ছেলে মিলে ধ’র্ষণ করেছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

প্রাথমিক জি’জ্ঞাসাবাদে গ্রেফ’তাররা হ’ত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন জানিয়ে সা’রওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘এরা সবাই মাদকসেবী। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় চু’রি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সকলেই জুয়াড়ি এবং ভি’কটিমের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত জুয়া, মাদ’কসেবন ও আ’ড্ডা দিত। এছাড়া ভিকটিমদের তারা নানাভাবে হয়রানি করত।’

তিনি জানান, কাজিমের ছেলে পারভেজ ধ’র্ষণসহ হ’ত্যা মামলার আসামি। আনুমানিক দেড় মাস আগে সন্ধ্যার দিকে গোপনে ভিকটিমের বাড়ির খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গৃহকর্মী ধরেছিল।

বিপুল টাকার সন্দেহেই ডাকাতির পরিকল্পনা

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, কয়েক দিন আগে গ্রে’ফতাররা জানতে পারেন, কাজল মালয়েশিয়া থেকে হু’ন্ডির মাধ্যমে প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন। এমন একটি ধারণা থেকে ঘটনার ৫ থেকে ৭ দিন আগে কাজিম ও হানিফ একত্রিত হয়। কাজলের বাড়িতে বশির, হেলাল, এলাহি এবং অন্যদের ডেকে নিয়ে ডাকাতির প’রিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। এদের দলে কাজিমের ছেলে পারভেজও ছিলেন।

বর্তমানে তাদের আয়ের মাধ্যমে নেশা ও জুয়ার টাকা সংকুলান না হওয়ায় এমন অপরাধ সংগঠনে যুক্ত হয় বলে জি’জ্ঞাসাবাদে গ্রেফ’তাররা জানিয়েছে বলে জানান সারওয়ার বিন কাশেম।

যেভাবে ডাকাতি হয়

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ এপ্রিল রাতে প্রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। এছাড়া হানিফ মা’দারগাছ এবং পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিঁড়ির ঢাকনা খুলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর অন্যদের প্রবেশের জন্য বাড়ির পেছনের ছোট গেট খুলে দেয়া হয়। কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহি এবং আরও কয়েকজন পেছনের গে’ট দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন।

কাজিম এবং হেলালসহ তিনজন প্রথমে ফা’তেমার ঘরে ঢুকে এবং কা’জিমের হাতে থাকা ধারালো অ’স্ত্র দিয়ে ফাতেমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টা’কাগুলো দিতে বলেন। ফাতেমা এত টাকা নেই বলে জানান।

পরে ফাতেমা তার রুমের স্টিলের শো’কেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচে চা’পা দেয়া ৩০ হাজার টাকা বের করে দেন। পরবর্তীতে ফাতেমার স্বর্ণালঙ্কারগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামিরা।

অন্যান্য রুমেও লুটতরাজ চলতে থাকে। আ’সামি বশির ও এলাহিসহ আরও একজন ভিকটিম নুরা’কে তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলা’র ভয় দেখিয়ে গলার চেইন ও স্বর্ণা’লংকার ছিনিয়ে নেন। তাকেও পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। এছাড়া আসামি বশিরসহ আরও একজন ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওয়া’রিনকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করেন। আ’সামি পারভেজও হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণে অংশ নেন। জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় আরও ৩ থেকে ৪ জনের নাম এসেছে বলে জানান র‍্যাবের এ কর্মকর্তা।

চিনে ফেলায় হ’ত্যা

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফ’তাররা জানায়, ফাতেমা ও তার মেয়েরা তাদের কয়েক’জনকে চিনে ফেলায় সবা’ইকে হ’ত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে ভিকটিমদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। প্রতি’বন্ধী শিশু ফাদিলকে হ’ত্যা করা নিয়ে আসামিদের ভেতর দ্বি’ধাদ্বন্দ্ব ও সংশয় তৈরি হয়। কিন্তু কোনো প্রকার সা’ক্ষী যেন না থাকে সে জন্য প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিলকেও হত্যা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.