বিয়ের বাজার, যেখানে টাকা থাকলেই মেলে কুমারী মেয়ে! (দেখুন)
রঙিন পোশাক পরে ব’ন্ধুদের স’ঙ্গে হইচই কিংবা ড্রেস পরে স্কুলের বারান্দায় দুষ্টুমি; এটাই চেনা ছবি অল্প বয়সী মেয়েদের মধ্যে। কিন্তু বিশ্বে বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে কুমা’রী বা অবিবাহিতা মেয়েদের দূ’রে থাকতে হয় সব রকম শখ শৌখিনতা থেকে। সে রকমই একটি দেশ বুলগেরিয়া। দেশটির সব জায়গায় যে এই ছবি, তা মোটেও নয়।
বুলগেরিয়ায় একটি সম্প্রদায় হলো ক্যালাইডঝি। এই গোষ্ঠী মূলত যাযাবর বা জিপসি। তাদের আর এক পরিচয় ‘রোমানি’ বা ‘রোমা’। জিপসি হলেও ধ’র্মীয় প্রাচীন রীতিনীতি মেনে চলে তারা। এই সম্প্রদা’য়ের মধ্যে এশীয় ও ইউরোপীয়, দুই জনজাতির বৈশিষ্ট্য বর্তমান। নৃতত্ত্ববিদদের ধারণা, সুদূ’র অতীতে আজকের রাজস্থান, হরিয়ানা ও পঞ্জাব এই অঞ্চলগুলো থেকে এই জিপসিদের উৎপত্তি। তারপর তারা ছড়িয়ে পড়েন সারা বিশ্বে।
‘ক্যালাইডঝি’ সম্প্রদায় সত’র্কভাবে ইউরোপের খোলা হাওয়া থেকে নিজেদের সনাতন ও রক্ষণশীল রীতিনীতিকে র’ক্ষা করে এসেছে। এখন এই গোষ্ঠীর প্রায় ১৮ হাজার মানুষ বাস করেন বুলগেরিয়ায়। তাদের গোষ্ঠীর নিয়ম হলো, কুমা’রী মেয়েরা ঋতুমতী হলেই তাদের স্কুলে যাওয়া ব’ন্ধ। তাদের জীবনযাত্রার আরো একটি বিচিত্র বৈশিষ্ট্য হল, ‘বিয়ের বাজার’।
ভারতের গুজরাটে আইন করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো আযান!
এক বছরে চার বার বসে এই বাজার। তবে বাজার না বলে একে আসর বলেই যথাযথভাবে বর্ণনা করা যায়। এখানে অবিবাহিত যুবকদের স’ঙ্গে দেখা হয় বিবাহযোগ্য কুমা’রীদের। তারা নিজেদের জীবনসঙ্গী এবং জীবনসঙ্গিনী নির্বাচন করেন। সারা বুলগেরিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ক্যালাইডঝি সম্প্রদায় এসে মিলিত হন এই বিয়ের মেলায়।
তারপরেই যে বিয়ে হয়ে গেল রূপকথার মতো, তা একেবারেই নয়। বরং এই পাত্রপাত্রী পছন্দের পরে শুরু হয় আ’সল পর্ব। এবার আসরে অবতীর্ণ হন অভিভাবকরা। দু’পক্ষের অভিভাবকদের মধ্যে শুরু হয় দর কষাকষি। রীতিমতো পণ পাওয়ার আশ্বা’স থাকলে তবেই মেয়ের বিয়ে দিতে সম্মত হন অভিভাবকরা। যাযাবর এই সমাজে কন্যাপণ যে কোনো পরিবারের কাছে উপার্জনের উৎস। বিয়ের আসরে সেজেগুজে হাজির হয় কুমা’রীরা। হবু জীবনসঙ্গীকে খুঁজে নিতে।
পাত্রী কেনাবেচার এই বাজার নিয়ে কয়েক বছর আগে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন সুইডেনের মিলেন ল্যারসন এবং অ্যালিস স্টেইন। ছবি তৈরির আগে দীর্ঘদিন গবেষণা ক’রেছেন তারা। ওঠে এসেছে চ’মকে দেওয়ার মতো বহু তথ্য। কয়েক হাজার বছর ধ’রে এই যাযাবর গোষ্ঠীর বিয়ের বাজার বসার রীতি প্রচলিত। ইদানিং কিছুটা রাশ আলগা হয়ে খোলা বাতাস প্রবেশ করেছে। এর আগে পাত্রীদের তাদের নিজেদের পাত্র নির্বাচন করার সুযোগও থাকত না। পুরোটাই হতো তাদের অভিভাবকদের নির্দে’শে।
এই রীতি যে মেয়েদের জন্য অবমাননাকর, তা মনে করেন না এই সম্প্রদা’য়ের মানুষ। এমনকি, একুশ শতকে বুলগেরিয়ার মতো আধুনিক ইউরোপীয় একটি দেশে দাঁড়িয়ে ক্যালাইডঝি গোষ্ঠীর মেয়েরা সাজপোশাক করে এই বাজারে পা রাখতে দ্বিধা করে না। শৈশবে তাদের শেখানো হয়, এটাই সমাজে’র নিয়ম।
করোনাভাইরাসের নমুনা আর পরীক্ষা করবে না আইইডিসিআর
সাধারণত কুমা’রীদের রূপ ও গুণের ওপর নির্ভর করেই নির্ধারিত হয় কন্যার ‘মূল্য’ বা কন্যাপণ। তিনশো থেকে পাঁচশো ডলার দাম পেয়েই থাকে কুমা’রীরা। কে কতো কন্যাপণ দিল, বা কতো কন্যাপণ পেল, সেটা এই সমাজে সামাজিক পরিচয়ের মাপকাঠিও বটে। আরও একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে কন্যাপণ। তা হলো, কুমা’রিত্ব। ফলে বিবাহযোগ্য কন্যার কুমা’রী থাকাটা খুবই গু’রুত্ব পূর্ণ। আর এতে মিলবে বেশি পণ।
২০১১ সালের আদশুমা’রি অনুযায়ী বুলগেরিয়ায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ রোমানি বা জিপসি-র বসবাস। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ ক্যালাইডঝি সম্প্রদা’য়ের। রোমানিরা যে এখনও ক’ঠোর ভাবে যাযাবর জীবন যাপন করে, তা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই লোপ পেয়েছে জিপসি ঘরানার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ‘বিয়ের বাজার’ এখনও পালিত রীতি। তবে এই গোষ্ঠীর আধুনিক প্রজ’ন্মের যুবক যুবতীদের একাংশের মধ্যে এই রীতির বি’রুদ্ধে ধীরে ধীরে হলেও ক্ষোভ জমেছে। তারা বিরো’ধিতাও করছেন। কিন্তু সার্বিকভাবে ‘বিয়ের বাজার’ বিলুপ্ত হয়নি। কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন এই রীতি এখনও শাসন করছে ক্যালাইডঝি সম্প্রদা’য়ের বিয়ের ভাগ্য।